২৩ শে জুন
: শুভ জন্মদিন,ফায়াজ!:উম্ম, আপনার তাহলে মনে আছে?! ধন্যবাদ!
: হ্যাঁ মনে কেনো থাকবে না! স্বামীর জন্মদিন মনে রাখা একজন স্ত্রীর দায়িত্ব!
শুনো টেবিলে ব্রেক-ফাস্ট রেডি করা আছে আর মা নানুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে! বাসা তালা দিয়ে যেয়ো, আমাকে জলদি অফিসে যেতে হবে!
: আচ্ছা একটু অপেক্ষা করেন, আমি নামিয়ে দিয়ে আসি!
: নাহ নাহ! আপনি খেয়ে বের হয়েন এইটুকুই!
এবং শুভ জন্মদিন! বেশি প্রেসার নিয়েন না জন্মদিনে হাহাহাহা!
( ফারিন অফিসের জন্য বের হলো)
[বিয়ের ৩-৪ মাসের মধ্যে মেয়েটা আমাকে ভালোই চিনে ফেলেছে, যাক ভালো! তিনি ঠিক থাকলেই হলো! আর আজকের এই দিনে আর কি বা চেতে পারি! বছরের ঠিক মাঝে জন্মদিন, ব্যাপারটা ভালোই কিন্তু আজও কেউ কখনো.. উম্ম থাক! এই বুড়া বয়সে এসে এইসব ভাবা ঠিক না! ]
বাথরুমে গিয়ে দেখি আয়নায় একটা স্টিকি নোট
(শুভ জন্মদিন ডাক্তার সাহেব, হাসি মুখে ব্রাশ করে নাস্তার টেবিলে বসে যেয়েন, ভুলে যেয়েন না কিন্তু)
[আমার বারবার নাস্তা করতে ভুলে যাওয়া এই ব্যাপারটা একবারে মাথায় নিয়ে নিয়েছে! খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই একটা মজবুত বন্ধন কাজ করছে দুজনের মাঝে ব্যাপারটা মোটেও খারাপ না! দুজনের মধ্যে হালকা ইতস্ততবোধ কাজ করে, তবে আমি মনে তা একসময় ঠিক হয়ে যাবে! ]
আলমারী খুলার সাথে সাথে একটা চিরকুট আর একটা বক্স পেলাম!
(এই শার্টটা আপনার জন্য! এটা পড়ে আজকে হাসপাতালে যেয়েন, আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট একটা উপহার)
স্কাই-ব্লু কালারের শার্ট, আমার খুবই পছন্দের একটা রঙ,বাহ মানিয়েছে আমাকে! চয়েজ তো ভালোই আছে তার! নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখি আমার পছন্দের পুডিং এবং নুডুলস তৈরি করেছে তিনি! খাবার টেবিলে বসেই তাকে ফোন করলাম:
: হ্যালো!
: হ্যা আমি পৌছে গিয়েছে এবং ধন্যবাদ বলা লাগবে না! এইটুকু করতেই পারি বুঝলেন!
: জি! এরপর তাহলে ট্রিট নিবেন না?
: এইটা আবার জিজ্ঞাসা করা লাগে? কোথায় দিবেন বলেন?
: আপনি অফিস শেষ করেন আমি নিতে আসবো আপনাকে! এরপর ঐখান থেকে যেখানে যাওয়া যায়!
: আচ্ছা ঠিক আছে! সাবধানে যেয়েন!
:জি!
.
.
.
.
.
অফিস থেকে ফারিনকে নিয়ে একটা রুফটপ রেস্টুরেন্টে বসলাম!
:আপনার জন্য আগে কখনো এমন কিছু করেছে?
:নাহ! ধন্যবাদ এতো কিছু করার জন্য! ইট মিনস এ লোট টু মি!
:উফ! এতো ধন্যবাদ দিতে হবে না! এই যে ট্রিট দিয়েছেন সেইটাই অনেক!
: তোমার জন্য কেউ কিছু করেনি?
:হ্যাঁ করেছি, কিন্তু তার বিনিময়ে যে আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে! সেই দেওয়া থেকে না দেওয়াই বেটার ছিলো না! কি বলেন?
: উম্ম! সরি!
:আজকের দিনে এইসব না বলি! বলেন আর কি লাগবে?
: অনেক কিছু লাগবে! কাল সকালে দুজনে একসাথে কফি খাই,আর কফিটা আপনার হাতের বানানো হলে মন্দ হবে না!
: হ্যা, Done deal! Hehe
[কিছুক্ষণ এভাবে গল্প করতে করতে হঠাৎ কি যেন হলো ফারিনের! বাসায় যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করতে লাগলো,এরপর আমরা বাসায় ফিরে এলাম! বাসায় আসার সাথে সাথে সে ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়লো, আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারলাম না! আমি হাতে পানির গ্লাস নিয়ে বারান্দার দিকে আগালাম!]
[একটা সময় ছিলো যখন ১২ টার বাজার পর অপেক্ষায় থাকতাম কখন সে আমাকে উইশ করবে, একপাক্ষিক ভালোবাসাগুলো বড়ই কঠিন, তবে তার জন্মদিনে আমি সবার আগেই তাকেই উইশ করতাম মেসেজ দিয়ে, কিন্তু যেদিন পারি তার বয়ফ্রেন্ড আছে সেদিন থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম সেই ভালোবাসা থেকে, তবে সেই এক টুকরো ছবিতে নিজের অনুভূতি বাচিয়ে রেখেছিলাম! যেদিন ফারিন রিক্সায় আমার হাত শক্ত করে ধরেছিলো সেদিন আমি উপলব্ধি করেছিলাম তার অনুভূতিগুলোকে! তার জীবনে হয়তো বড় এক ধাক্কা গিয়েছে, সেটা তাকে আজও তাড়া করে বেরায়, আমি কখনো তাকে জোর করবো না জানার জন্য, যদি সে.......
হঠাৎ করে ফারিনের চিতকার শুনা গেলো, আমি দৌড়িয়ে তার কাছে গেলাম,গিয়ে দেখি মেয়েটা ঘেমে একাকার আর হাত-পা কাপছে! আমি নিজেই ছটফট করা শুরু করলাম। ওর মাথায় হঠাৎ করেই অনেক জ্বর, কিভাবে কি হলো বুঝলাম না! আমি ওকে পানি খাওয়ালাম! মাথায় হালকা পানি দিয়ে মুছিয়ে অকে বারান্দার চেয়ারে বসালাম!
এই ফাকে ওর জন্য ঔষধ এবং ঠান্ডা পানি নিয়ে এলাম।
: তুমি ঠিক আছো?
:এই যে আপনি থেকে তুমি নেমে এলে!
:ফারিন কি হয়েছে তোমার?! আমাকে খুলে বলো!
: ফায়াজ, আমি আজ রেস্টুরেন্টে ওকে দেখেছি
:কাকে?
: রাব্বিকে!
: তোমার এক্স?!
:হ্যাঁ,
:মানে? কি বলছো তুমি?
:ওর সাথে ১ বছরের মতো সম্পর্ক ছিলো।
.
.
(পানি খেয়ে নাও)
.
.
.
ফায়াজ, আসলে আমি যে অতীতের কথা তোমাকে বলতে গিয়েই পারি নি, সেটা শুনার পর তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেও না কিংবা আমাকে ভুল বুঝো না!
: বুঝবো না! বলতো কি হয়েছে?
: রাব্বির জন্মদিনের দিন আমি ওর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করি এবং ঐদিনই আমি প্রথম কিস করি ওকে ! এরপরের মোমেন্টাম টাই এমন ছিলো যে ও আমকে জোর করে ওর গাড়িতে নিয়ে যায় এবং আমার সাথে জোর করে সেক্স করতে চায়!
আমি বাধা দেই এবং আমি সেদিন অনেক কষ্ট করে ঐ অবস্থান থেকে বের হই!
এরপর মাঝে মাঝেই সে আমার গায়ে হাত তুলতো,তবুও আমি ওকে বোকার মতো ভালোবাসতাম
একদিন ও আমাকে ড্রাগস খাইয়ে জোরপূর্বক আমার সাথে.....
.
.
.
আমি সেখান থেকে অনেক কষ্টে পালিয়ে আসি!কিন্তু সেই ভয়াবহতা আজও আমার পিছু ছাড়েনি,আজ আমি ওকে দেখার পর সেই দিনগুলো মনে পড়ে যায়, জানি আমার সম্মতি ছিলো কিন্তু আমি সেটা করতে চাইনি, যেটার জন্য সে আমাকে মারতো, জোর করতো! আমাকে ঐরাতে অনেক অত্যাচার করেছে, নিজের জীবন নিয়ে বেচে এসেছিলাম ভাগ্যের জোরে! আমাকে মাফ করে দিও ফায়াজ, আমি লুকিয়েছি এতো কিছু...
: ....
[আমার মুখ থেকে কোনো আওয়াজই বের হচ্ছিলো না, আমি ফারিনকে জড়িয়ে ধরলাম, মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সান্ত্বনা দিলাম! এখানে আমার কি করার ছিলো তা আমার জানা নেই, কিন্তু আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না,খুব রাগ উঠছিলো খুব অভিমান জেগে উঠছিলো খুব কষ্ট লাগছিলো, কিন্তু আমার পুরনো স্বভাব। ফারিনকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম, শক্ত করে আমার হাত ধরে রেয়েছিলো।
আর এইদিকে ওর কথাগুলো শুনে আমি এখনো নরমাল হতে পারছিলাম না ! মেয়েটি এতো কিছু কিভাবে নিজের মধ্যে রাখলো, তা আমার বুঝার বাইরে কিন্তু.....
সকালে উঠে আমি টেবিলের ফারিনের কফি আর
ব্রেকফাস্ট রেডি করে বেরিয়ে পড়লাম! আম্মুকে বললাম বাসায় এসে ওর কাছে থাকতে! ফারিনের অফিসে কল করে ছুটি নিয়ে দিয়েছি।
বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে আমার টেবিলে একটা বক্স!
("শুভ জন্মদিন, ফায়াজ! আমি তোমাকে কতো ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি হয়তো মুখে বলতে পারবো না কিংবা তোমার স্পর্শের সেই অনুভুতিতেও তা আমি নিজে কখনো অনুভব করবো কিনা তাও সন্দীহান! কিছু ঘটনা মানুষকে চেপে মেরে ফেলে, ঠিক ঐভাবেই আমি মারা যাচ্ছিলাম, কিন্তু তুমি আমার জীবনে এক আশার আলো হয়ে এসেছো! আমাকে বাচাতে শিখিয়েছো, আমাকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখেয়েছো, আমি তোমার মধ্যে নিজের বেচে থাকার ইচ্ছা দেখেছি, কারণ দেখেছি! ধন্যবাদ আমাকে বাচানো জন্য ডাক্তার সাহেব! ঔষুধ না দিয়েই আমাকে বাচিয়ে তুললে, হয়তো তোমার মতো ভালোবাসা দিতে পারবো না কিন্তু প্রতিদিনই আমি তোমাকে নতুন করে ভালোবাসতে চাই, তোমার প্রতি আমার সম্মান বাড়িয়ে দিতে চায়!
ভালো থেকো, সুস্থ থেকো, আমার ডাক্তার সাহেব ❤️
এই বইসেট তোমার জন্য!
ফর মাই ম্যাজিকাল ডাক্তার ")
হ্যারি পটারের অরিজিনাল বুকসেট এবং এই চিঠি। আমি চোখের পানি থামিয়ে রাখতে পারিনি,পাশে তাকিয়ে দেখি পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে সে আমাকে দেখছে!
আমি ফারিনকে জড়িয়ে ধরলাম,
: ফায়াজ আমাকে মাফ করে দিও! আমার তোমাকে আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিলো, কিন্তু আমি না আসলে পারিনি.. আমি
: চুপ! একটা কথাও বলবে না! আমি তোমাকে জোর করিনি কখনো, কারণ অতীত পিছনে চলে গিয়েছে, সেটার ইফেক্ট বর্তমানে ফেলানো যাবে না, তা মনে করে কেনো নিজের বর্তমান খারাপ করবে! আর আমি মনে করি শেয়ার করলে হয়তো তোমার একটু হাল্কা লাগতো, এভাবে নিজের মধ্যে জমিয়ে রেখে অসুস্থ হয়ে পড়ার দরকার নেই! আমি আছি, আমি থাকবো আজীবন!
আই লাভ ইউ ❤️
..
..
..
..
: আজ বাসায় বিশ্রাম নিবে আমি আগে আগেই বাসায় চলে আসবো এরপর নেটফিক্স এন্ড চিল হবে! একসাথে Extraction 2 দেখবো! হাহাহা!
: আচ্ছা! সাবধানে যেয়ো.
.
.
.
.
: ফায়াজ, তোমার মানিব্যাগটা দেখি!
আমি আতকে উঠলাম, হঠাৎ সে ম্যানিব্যাগ কেনো দেখবে! ও কি ঐ ছবিটা দেখেছিলো! না দেখার তো কথা না! আমি তো সেটা অনেক আগেই ফেলে দিয়েছিলাম!
: কেনো হঠাৎ? ম্যানিবাগ কেনো? টাকা লাগবে?
: আমি আমার স্বামীর ম্যানিব্যাগ দেখতে পারবো না!
: হ্যা,পারবে পারবে। এই নাও!
ফারিন ম্যানিবাগে একটা ছবি ঢুকিয়ে দিলো, এবং তা আমাকে দিয়ে দিলো!
: দেখো এবার ঠিক আছে! অন্য ছবি না রেখে এই ছবি রাখো, ভালোবাসা বাড়বে বেশি করে!
ম্যানিব্যাগে ফারিনের ছবি,
আমি জলজল চোখে তার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বাসা থেকে বের হলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। ও দেখেছিলো ঐ ছবিটা, এরজন্যই.....
.
.
.
.
৫ মাস পর.....
: ফারিন,তুমি কি ঐ ছবিটা দেখেছিলে?
: কোন ছবি? কিসের ছবি?
: না মানে ম্যানিব্যাগে?!
: কেনো কিছু ছিলো নাকি?!এই এই তুমি আবার কোনো কিছু লুকাচ্ছো না তোহ!
: নাহ নাহ! আমি এমনিই জিজ্ঞাসা করছিলাম!
.
.
.
.
.
POV of Farin :
আমি জানি ফায়াজ একটা মেয়ে ভালোবাসতো, আমি ওর ঐ ডায়েরীতে পড়ে নিয়েছিলাম অনেক আগেই! যেদিন আমি দেখলাম ওর ঐ ডায়েরীটা আলমারিতে নেই, তখনই ওর জন্য আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়! ও আমার জন্য যা করেছে তা হয়তো আমি শোধ করতে পারবো না কিন্তু আমি ওকে প্রতিদিন নতুন করে ভালোবাসতে চাই, ওর সকল স্বপ্ন পূরণ করতে চাই! কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়, শুধুমাত্র আমার জন্যই যেন সে বেচে থাকে!
আমার বেচে থাকার প্রার্থনা তাকে ঘিরেই ❤️
ম্যানিব্যাগের সেই ছবি যেদিন ও নিজে থেকে ফেলে দিবে সেদিন থেকেই সে আমার!
.
.
.
.
সে ঐদিনই ফেলে দিয়েছিলো ছবিটি রিক্সায় উঠার আগে, তার মানে সে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে! সে তাকে ভুলার চেষ্টা শুরু করেছে!
রিক্সায় সেদিন তোমার হাত ধরে আমি আমার জীবনের নতুন সূচনা করেছি! আমার জন্য কেবল তুমি এবং এই আলো যেন না নিভে যায় তা আমি আজীবন ধরে রাখবো! ❤️
.
.
((সমাপ্ত))
[সম্পূর্ণ গল্প এবং চরিত্র কাল্পনিক]
Comments
Post a Comment