Skip to main content

পরিবর্তন/পরিস্থিতি?

একদিন একজন চাকুরিজীবি সারামাস অধিক কষ্টের পর তার বেতন পেলো তার হাতে !সারা বছর ধরে কিছু জমানো টাকা আছে ব্যাংকে আর সাথে কিছু জমা টাকা আছে পকেটে। বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে নিজের বউয়ের জন্য মাস শেষে উপহার কিনবে বলে ঠিক করে রেখেছিল।
দিনশেষে অফিস করে বাসায় যাওয়ার পথে সে তার স্ত্রীর জন্য ছোট্ট একটা সোনার হার কিনে বাসায় যাচ্ছিল এবং সাথে ছিল তার মাসের বেতন। ঠিক বাসায় যাওয়ার পথে এক চোর তার ব্যাগ চুরি করে দৌড় দেয় এবং লোকটি চোরটিকে ধরতে ব্যর্থ হয়।

রাস্তার একধারে বসে লোকটি ভাবতে থাকে সে কি করবে এখন ? বাসা ভাড়া বাকি ! বাজার বাকি ! বেতন চুরির সাথে সাথে স্ত্রীর জন্য ভালবাসার উপহারটাও হারালো !
পুলিশে কমপ্লেন করে সে বাসায় ফিরলো !
বাসায় এসে দেখে যে তার স্ত্রীর বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে সুন্দরভাবে সেজেছে।পরনে কমলা শাড়ী,কপালে টিপ। ঘর থেকে ভেসে আসছে খাবারের সুগন্ধ।
স্বামীর টেনশনযুক্ত চেহারা দেখে ব্যাকুল হয়ে উঠলো তার স্ত্রী। স্বামী তার সব কথা তাকে খুলে বললো।
স্ত্রী হেসে বললো যে ,আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যেই করে।আমার কিছু গহনা আছে তা বেঁচে বাসা ভাড়া আর বাজার করা যাবে ।তুমি চিন্তা করো না গো !! ফ্রেশ হয়ে আসো ,জানো আজ আমি তোমার প্রিয় বিরিয়ানী রান্না করেছি ! একসাথে খাবো আজ !

ভালবাসাময় রাত এখন এক অভাবের রাতে পরিণত হলো। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তারা যখন শুইয়ে পড়লো , ঠিক তখন স্ত্রী বললো - এই শুনো আমাকে একটা কবিতা শুনাবে ! ঐযে মেঘ আর পাহাড়ের!
--হ্যা শুনাচ্ছি !



আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি। 
শোনো। 
আগেই বলেছি, পাহাড়টা ভালোবেসেছিল মেঘকে,
আর মেঘ কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে 
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা 
সে তো আগেই শুনেছো। 
সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন। 
পাহাড় মেঘেকে বললে, আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে। 
মেঘ পাহাড়কে বললে, আজ তোমাকে স্মান করিয়ে দেবো চন্দন জলে। 
ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী, পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।
 সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের 
আগুনে পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে। 
হঠাৎ, আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের জগঝম্প 
ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের ভঙ্গিতে ছুটে এল এক ঝাঁক হাওয়া 
মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে ওঠ্ ছুড়ি!
তোর বিয়ে। এখনো শেষ হয়নি গল্পটা। 
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেল ঠিকই 
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিনই ভুলতে পারল না। 
বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতো পারো পাহাড়টার হাড় পাঁজর, 
ভিতরে থৈ থৈ করছে শত ঝর্ণার জল।


মাঝরাতে হঠাত কলিং বেল বেজে উঠলো। স্বামী দরজা খুলে দেখলো একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে । লোকটি জিজ্ঞাসা করলো -এইটা কি জনাব রহমান এর বাসা ?
 --জি জি ! আমিই রহমান ।
--স্যার !! আপনার ব্যাগটি আমার কাছে ।এই নিন।
--এইটা তো আমার ব্যাগ।ধন্যবাদ আপনাকে আমার এই ব্যাগটী দেওয়ার জন্য !এতে আমার জীবনের আমানত ছিল।
--দেখে নিন ,সব ঠিক আছে কিনা !
--হ্যা সব ঠিক আছে ।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।   
--জিজ্ঞাসা করবেন না আমি ব্যাগটি কিভাবে পেলাম ?
-- হ্যা হ্যা,কিভাবে পেলেন ?
-- স্যার আসলে আমিই আপনার ব্যাগ চুরি করেছিলাম।
--কি?? কেনো ? (রাগান্বিত স্বরে)
-- জী স্যার। আমিই চোর । কিন্তু স্যার পরিবর্তনের ধারায় না পরিস্থিতির ধারায় ।
-- কি ?? কি এমন পরিস্থিতি তোমার যে ? যাতে তুমি চোর হলে??
-- স্যার আমি আসলে একজন চিত্রশিল্পী। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এবং বেঁচে থাকার তাগিদ আজ আমাকে চোর বানিয়েছে ।
--- না ,তুমি পরিস্থিতির দোষ দিতে পারো না !! সবারই সমস্যা কিন্তু তাই বলে কি সবাই চোর হবে ?
আর তুমি তো চিত্রশিল্পী ,মহান আল্লাহতায়ালা তোমাকে অশেষ গুণ দিয়েছে তাও তুমি বলছো ???
-- স্যার,এই গুণের কি কোনো কাজ আছে ??
দিনশেষে বউ দরজায় অপেক্ষায় থাকে আমি কখন আসবো এবং সাথে বাজারো থাকবে । ছোট্ট মেয়েকে পড়ানোর টাকা ,অসুস্থ বাবা-মায়ের জন্য ওষুধের টাকা...... একদিকে স্বামীর কর্তব্য একদিকে বাবার কর্তব্য আবার আরেকদিকে সন্তানের কর্তব্য!!! কি করবো বলেন স্যার??
--তাই বলে তুমি হার মেনে চুরি করবে ? তোমার গুণকে কাজে লাগাও নিজের চেতনাকে এগিয়ে নাও এবং নিজের শিল্পকে বড় করে দেখো তবেই তুমি জিতবে এই যুদ্ধে।
-- স্যার জানেন আমি যখন আপনার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম ঠিক তখন আমি নিজ থেকেও দৌড়াচ্ছিলাম,যাতে অনেক দূর চলে যেতে পারি,এই জীবন থেকে দৌড়ে চলে যেতে চাচ্ছিলাম ।কিন্তু বাসায় গিয়ে আপনার ডায়রি পড়ে বুঝতে পারলাম সবার জীবনেই সুখ-দুঃখ আছে , তাই রাতে ঘুমাতে না পেরে চলে এলাম। কিন্তু এসে ভালো কাজ করেছি আমি কেননা আমি সঠিক জায়গায় এসেছে !! আজকের পর থেকে আমি নিজের চেতনাকে জাগাবো স্যার। নিজেকে চিনবো এবং নিজেকে বড় করে দেখবো।
 ---হ্যা।নিজের পরিচয়কে বড় করে তুলে বাচতে শিখো এওবেই তুমি সফল হবে। এবং কারো কাছে হাত না পেতে নিজেকে বড় করে দেখো দেখবে জয় তোমার হবেই।
---ধন্যবাদ স্যার। আজ কিছু শিক্ষা পেলাম !দোআ করবেন আমার জন্য ।
-- অবশ্যই । তবে যাওয়ার আগে কিছু টাকা নিয়ে যাও কাজে লাগবে তোমার !!
-- কি বলেন স্যার !! একদিকে হাত পাততে না করলেন আরেকদিকে টাকা নিতে বলেন !!
লাগবে না স্যার ,আপনি যা বলেছেন তা নিয়েই জীবনে আগাতে পারলে আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব !




আমরা পরিবর্তনের ধারায় ভেসে যাচ্ছি। আমরা দিনের পর দিন পরিবর্তিত হচ্ছি ,কিন্তু কেউ কেউ পরিস্থিতির কারণে নিজেদের পরিচয়কেই লুকিয়ে ফেলসে। দুখের কারণে মানুষ নিজেদেরকে চিনতে পারছে না আর এ কারনেই মানুষ বিপদে পড়ে চুরি ছিনতাই সহ আরো খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে।
তবে মানুষ ভুলে যায় তাদের গুণকে ,তাদের চেতনাকে ।অভাবের কবলে পড়ে মানুষ নিজেদেরকেই হারিয়ে ফেলে এবং সাথে সাথে ভুলে যায় নিজেদেরকে।

সাধারণ মানুষের জীবনে সমস্যা থাকবে ,অভাবে থাকবেই তাই বলে ভেঙ্গে পড়লে হবে না । নিজেদেরকে দুঃখ-অভাবের বিপরীতে নিজেদেরকে দাঁড়িয়ে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ সবাইকে কিছু না কিছু গুণাগুণ দিয়েছে তাই বলে তার অপব্যবহার না করে সেই গুণাগুণকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে তুলে ধরতে হবে। নিজেদের চেতনায় নিজেদের জাগ্রত করতে হবে। তবেই নিজেই জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে। 

পরিস্থিতির কবলে না পড়ে নিজেদেরকে নিজ চেতনায় জাগ্রত হয়ে নিজেদের পরিচয়কে তুলে ধরতে হবে।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

একটি মধ্যবিত্ত ভালবাসার গল্প

কিছু গল্প সবসময় এক হয় না!  পার্থক্য, ভেদা-ভেদ সবকিছুতেই থাকে।ঠিক তেমনি ভালবাসার গল্পগুলোতেও কিছু মিল-অমিল পাওয়া যায়!আর আজকে ঠিক তেমনি অতি সাধারণ একটা গল্প তুলে ধরতে যাচ্ছি! 'মধ্যবিত্ত' শব্দটা হয়তো সকলেরই অনেক পরিচিত। মধ্যবিত্ত মানুষগুলো ধনী-গরীব হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।তাদের চিন্তা-ভাবনা,চলাফেরা এমনকি জীবনযাপনও ভিন্ন। আর মধ্যবিত্ত ভালবাসা এর মানে বুঝাই যাচ্ছে এর মধ্যেও কিছুটা ভিন্নতা আছে! ♥ কলেজ পড়ুয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের সাথে প্রেম করা বর্তমান যুগের মেয়ের জন্য তুলনামুলক প্যারাময়! কেননা এইসকল ছেলের থাকে না টাকা-পয়সা,মোটরসাইকেল আর কত কি!  কিন্তু মেয়েরা ভুলে যায়, অন্যদের মতো ঐ ছেলেদেরও সুন্দর একটা মন আছে, তারাও ভালবাসতে জানে!  টাকা-পয়সা বাইক এইসব শো অফ করাই কি ভালবাসা?? প্রেমিকার জন্মদিনে বড় অনুষ্ঠান করা, এ্যানিভার্সারি পালন করা আর আজাইরা টাকা খরচও কি ভালবাসা?? :/ ভালবাসা এমন হতে পারে না........ ১০০ টাকায় রিক্সা ভাড়া করে কিছুদূর ঘুরা! পাশাপাশি বসে একসাথে ফুচকা খাওয়া!♥ জন্মদিনে/অথবা অন্যকিছুতে টিফিনের এবং যাতায়াতের টাকা বাঁচিয়ে প্রিয় মানুষের জন্য ছোট্ট কিছু করা ...

তুমি, আমি আর সংসার (খুনসুটে অতীত)

  ২৩ শে জুন : শুভ জন্মদিন,ফায়াজ! :উম্ম, আপনার তাহলে মনে আছে?! ধন্যবাদ! : হ্যাঁ মনে কেনো থাকবে না!  স্বামীর জন্মদিন মনে রাখা একজন স্ত্রীর দায়িত্ব! শুনো টেবিলে ব্রেক-ফাস্ট রেডি করা আছে আর মা নানুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে! বাসা তালা দিয়ে যেয়ো, আমাকে জলদি অফিসে যেতে হবে! : আচ্ছা একটু অপেক্ষা করেন, আমি নামিয়ে দিয়ে আসি! : নাহ নাহ! আপনি খেয়ে বের হয়েন এইটুকুই! এবং শুভ জন্মদিন!  বেশি প্রেসার নিয়েন না জন্মদিনে হাহাহাহা!  ( ফারিন অফিসের জন্য বের হলো) [বিয়ের ৩-৪ মাসের মধ্যে মেয়েটা আমাকে ভালোই চিনে ফেলেছে, যাক ভালো! তিনি ঠিক থাকলেই হলো! আর আজকের এই দিনে আর কি বা চেতে পারি! বছরের ঠিক মাঝে জন্মদিন, ব্যাপারটা ভালোই কিন্তু আজও কেউ কখনো..  উম্ম থাক! এই বুড়া বয়সে এসে এইসব ভাবা ঠিক না! ] বাথরুমে গিয়ে দেখি আয়নায় একটা স্টিকি নোট (শুভ জন্মদিন ডাক্তার সাহেব, হাসি মুখে ব্রাশ করে নাস্তার টেবিলে বসে যেয়েন, ভুলে যেয়েন না কিন্তু) [আমার বারবার নাস্তা করতে ভুলে যাওয়া এই ব্যাপারটা একবারে মাথায় নিয়ে নিয়েছে! খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই একটা মজবুত বন্ধন কাজ করছে দুজনের মাঝে ব্যাপারটা মোটেও খা...

বন্ধুত্ব

বন্ধু শব্দটা মূলত অনেক কমন!  শৈশব থেকেই এই শব্দের যাত্রা শুরু হলেও কৈশোরকাল থেকে বন্ধু শব্দটা উপলব্ধি করা যায়! আর সত্যি বলতে এয়ারটেলের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই আসল বন্ধুত্ব এর মর্ম বুঝা যায়! :p কমবেশি বন্ধু কিন্তু সবারই থাকে।  তবে সব বন্ধু এক রকম না কিংবা একজাতের না. .. খুব অল্প কিছু বন্ধু থাকে, যারা একদমই অন্যরকম !! সবার থেকে ভিন্ন! অন্য বন্ধুরা যখন বৃষ্টি হইলে তোমার জন্য ছাতা নিয়ে দৌড়ায়ে আসবে ... "এই নে " কিংবা এক ছাতার নিচে থেকে একসাথে যাবে! অন্যরকম বন্ধুগুলা তখন উল্টা তোমার মাথার ছাতাটা কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দিয়ে বলবেঃ "ছাতা কি কামে লাগে ?? চল ভিজি !!" বন্ধুর পাল্লায় পড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তোমার জ্বর হবে ...পরিণতি ভালো হবে না! তুমি যখন কাতর গলায় বলবা, তোমার জ্বর আসছে, শুধুমাত্র তোর কারণে!.. তখন ঐ অসাধারণ বন্ধু তোমারে বলবেঃ(হাসতে হাসতে) "তো ?? আজকে জ্বর হইছে, কালকে নিউমোনিয়া হবে !!" "কি বলতেছিস এগুলা ??তুই আমারে বোদোয়া দিতেসিস!!" "হুম ... আমি দোয়া করি তোর নিউমোনিয়া হোক !!" "কেন ? তাতে তোর কি লাভ?" "তোর নিউমোনিয়া হইলে...