সকাল ৮টায় এসেই ১০০ টা বৃত্ত ভরাট করলাম, মাঝে হালকা ব্রেক পাওয়াতে নিচে গিয়ে একটু চা খেয়ে উপরে উঠলাম! ফার্মগেটের সকালটা কেন জানি একটু অন্যরকম, তাও আবার ডিসেম্বর মাস! টানা ২ ঘন্টার লেকচার শেষে আবারো বৃত্ত ভরাট করে বের হওয়ার সাথে সাথে আমার কলেজের এক ক্লাসমেটের সাথে দেখা! কুশল বিনিময় শেষ করে, সে জানালো আজকে থেকে তাদের গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন প্রোগ্রামের নাচ-গানের রিয়ারসেল! ছেলেটা ভালোই ব্রিলিয়ান্ট ছিলো, সলিমুল্লাহ মেডিকেলে নাম এসেছে! সাথে আরো অনেকের সাথেই দেখা হলো, সবার সাথে কুশল বিনিময় শেষ করে বের হলাম কোচিং থেকে! ফার্মগেট এখন এক ব্যস্ত নগরী, সকাল থেকেই ব্যাপারটা এমন থাকে কিন্তু ১০ টার পর মানুষের ভীড় একটু বেশি বেড়ে যায়! কোনোমতে বাসে উঠে, কানে হেডফোন দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম!
যতই মোটিভেশন নেও কিংবা হও না কেন, সেটা ১/২ দিন পর হাওয়া হয়ে যায়, কেনো জানি বেশিদিন সেটা থাকতে পারে না! এটার উত্তর জানাটা জরুরী। আমার মনে হয় এজন্যই বারবার ভাইয়া-আপুরা আমাদের মোটিভেট করতেই থাকে! একই পড়াশুনা বার বার করা যেমন ধৈর্য্যর ব্যাপার, ঠিক তেমনি আশেপাশের পরিবেশ দেখে নিজেকে সামলে রাখা আরো মুশকিল ব্যাপার।
প্রতিদিনের রুটিনটা এমনই যাচ্ছে! কয়েকদিন পর এমন দাড়ালো যে, এক রুমে কিছু শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আবার চেষ্টা চালাচ্ছে,ঠিক তার পাশের রুমেই আরেক দল শিক্ষার্থী তাদের সাফল্যের উল্লাসে মেতে উঠছে! কেউ জয়ী আর কেউ পরাজয়ী! এটাই বাস্তবতা!
একদিন কোচিং শেষে,
: আরেহ! কি অবস্থা মামা?
:এইতো আছি রে! তোর কি খবর? শুনলাম সিলেট মেডিকেল হয়েছে তোর! অভিনন্দন!
:হ্যা এইতো! ভর্তি শেষ করে আসলাম কালকে আর আজকে এই প্রোগ্রামে নাম দিলাম! তুই আমার কোচিং করতেসিস?
:হ্যা! আরেকবার করে দেখি কপাল কি আছে!
:আচ্ছা আচ্ছা! দেখলি কি হলো?! এতো বৃত্তি,A+ দিয়ে কি হলো, চান্স তো হলো না! আর আমার একবারেই হয়ে গেলো, থাক চেষ্টা চালা! যাই আমি ডাকতেসে আমাকে!
এভাবে কথাশুনানোর মানুষগুলো দিয়ে চারপাশ ভর্তি ছিলো! হালকা ব্রেকে ফেইসবুকে ঢুকলে সবার স্ট্যাটাস দেখতে ভালোই লাগতো, কিন্তু একটা সময় যে এটা নিজেকে এতো পীড়া দিবে তা ভাবি না! নরমাল চোখে দেখার চেষ্টা করলেও কিছু কিছু মানুষের কথা আপনাকে ব্যাথা দিবেই!
একদিন রাতে কোচিং-এর মার্ক্সস আসার পর অনেক মন খারাপ ছিলো, ঐদিকে ঐদিন ছিলো গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম! সবার এ্যাপ্রোন পড়া ছবি দেখে ভালোই লাগছিলো, হাতে নতুন বই, হাজারো হাসিখুশির ছবি এবং সাফল্য! সবাই এইরকম মুহুর্তগুলো বারবার চায়! কিন্তু তা সবার কপালে জোটে না! ফোনে সকালের ক্লাসের মেসেজ আসলো, বসে পড়লাম টেবিলে পড়তে....
মাঝরাতে হঠাত আম্মু এলো রুমে, এসে কিছুক্ষণ মাথায় হাতে বুলিতে, ফু দিয়ে দিলো, যাওয়ার আগে বললো -- " টেনশন নিস না বাবা,ইনশাআল্লাহ এইবার তোর হয়েই যাবে! আল্লাহ ভরসা "
to be continued!
( আমার এই লেখা শুধুমাত্র তাদের জন্যই যাদের গল্প সবার কাছে পৌছায় না, যারা নিজেদের ব্যর্থতাকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কষ্ট সবাই করে, চেষ্টা সবাই করে কিন্তু সবাই তো দিনশেষে সফল হয় না! আমার এই লেখা তাদের জন্য। উৎসর্গ তোমাদের জন্য♥)
( বিঃদ্রঃ-কাউকে দুঃখ কিংবা কষ্ট দেওয়ার জন্য এই লেখা হয়নি।)
Comments
Post a Comment