Skip to main content

যতটা দূরে

দেখতে দেখতে ৮টা বছর চলে গেলো
হয়তো স্থানটি আগের মতো নেই !!
সময়টা আগের মতোই , সেই মৃদু রোদ , হালকা হাওয়ায় গাছের পাতাগুলো নড়ছে!!
শুধু আশেপাশের মানুষগুলো আর সময়ের সাথে অবস্থানও পরিবর্তন হয়েছে।
.........
দিনটা ছিল ১৩ই ফেব্রুয়ারী।
ফাল্গুনের উৎসবে মাতোহারা সকলেই। হয়তো বাঙ্গালিরা এসকল উৎসবে মেতে উঠতে পছন্দ করে । আর তাই আশেপাশের মানুষগুলোও সেই ট্রাডিশন অনুযায়ী পরিবেশকে উৎসব উপযোগী করে তুলেছে।
আমি একাকী বসে আছি। মগ্ন হয়ে গাছের পাতাগুলো দেখছিলাম। হয়তো আশেপাশের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছিল আজকেই ভ্যালেন্টাইন ডে। হয়তো টি-শার্টে আমাকে অন্যদের থেকে ব্যাতিক্রম মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি পাত্তা দেই না মানুষ এর নজরকে !!
হঠাৎ পিছন থেকে এসে একজন চোখ দুটো চাপ দিয়ে ধরলো। আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম।আমার তো আর কেউ নেই যে আমার সাথে এমন কিছু হবে।
হঠাৎ মিষ্টি একটু স্বরে শোনা গেল - "অনুপম" 'বলতো আমি কে ?'
আমি- ঊম্ম ... হবে কোনো এক মেয়ে অথবা এক প্রেয়সী ।
(মেয়েটি হাত ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়ালো )
আমি তো অবাক । কিন্তু কি কারণে অবাক তা বুঝলাম না।
হয়তো তার সাজসজ্জা দেখে অথবা তার এই ব্যবহার দেখে কেননা অনামিকা এমন মেয়ে না !!
অনামিকা- কিরে এইরকম বলদের মতো তাকায় আছিছ কেন ? আমাকে কি বেশি সুন্দর লাগতেসে ?
আমি- হুম । আগে তোকে কখনো শাড়িতে দেখি নাই । হলুদ শাড়িতে তোকে অনেক সুন্দর লাগসে। হঠাত আমার কাছে ?
অনামিকা- কিছুই না । কেবলমাত্র এই গোলাপটা দিতে আসছি রে!
এই নে !!! পহেলা ফাল্গুন এর শুভেচ্ছা :]
গোলাপটা আমি ঠিকই নিলাম আর কিছু বলার আগেই ও চলে গেলো।
ওর দিকে চেয়েই রইলাম , কখন যে ও অদৃশ্য হয়ে গেলো তা বুঝিনি !
দিনের এই শেষটা যে এমন হবে তা ভাবিনি আগে।
হয়তো মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কথাগুলো আর ডাইয়েরীতে না লিখে কালই বলে ফেলি।আর অপেক্ষা ভালো লাগে না।দীর্ঘ ২.৫ বছর অপেক্ষার পর হয়তো এই সুযোগ এলো।
রাতে গোলাপ ফুলটা হয়তো ডায়েরীতে যায়নি।হাতেই ছিল কারণ হাতছাড়া করতে ইচ্ছা করছিল না। সামনে রেখে শুধু ওর কথা ভাবছিলাম।
১৪ ফেব্রুয়ারী
১২টা ০১ মিনিট
ভাবলাম হয়তো ওকে ফোন দিয়ে উইশ করি।
ফোনবুকে হয়তো সব নাম্বারগুলো ওরই মনে হচ্ছিল :]
আগে হয়তো কল দেয়া হতো ম্যাথ এর সমাধান অথবা অন্য বিষয়ের পড়ার জন্য কিন্তু আজকে ব্যাপারটা অন্য।
কিন্তু ......
"" আপনি যেই নাম্বারে ফোন করেছেন তা এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে!! ""
মনটা ভেঙ্গে গেলো। আর আমি ঐ পাবলিক না যে বারবার ফোন দিবো!!
তাই ফোনটা সাইলেন্স করে শুয়ে পড়লাম।
কিচ্ছুক্ষণ পর একটা কল । হয়তো ভাবিনি ও আমাকে ফোন ব্যাক করবে ।
ওর জাস্ট কণ্ঠ শুনে আমি ৫ সেকেণ্ডের জন্য নিশ্চুপ ছিলাম এরপর আর কি নরমালই কথা হলো কিন্তু কথাগুলো বললাম না রেখে দিলাম ঐ গোলাপ এর জন্য কেননা কথাগুলো কেবলমাত্র গোলাপই ব্যাখ্যা করতে পারবে।
দুপুর ২.৩০ মিনিট হয়তো ঐ জায়গাতেই দাঁড়ানো । কিন্তু গতকাল অপেক্ষা পরিস্থিতি ভিন্ন।গোলাপ হাতে রেখে শুধু অনামিকার অপেক্ষা। আর আশেপাশের পরিবেশকেও কেন জানি আজ অনেক ভাল লাগছে।
আসলেই লাভ ইজ স্যামথিঙ্ক !!
হঠাত তাকে দেখা গেলো । আজ লাল শাড়িতে তাকে অপূর্ব লাগছে । দূর থেকেই মনে হচ্ছিল যে ও শুধু আমার জন্যই এসেছে! হাতে লাল চুড়ি এবং নাকে ছোট্ট একটা নাকফুল।প্রেয়সী এর অপেক্ষা মনে হচ্ছিল আজ সার্থক হবে। হাত এর গোলাপটা পিছনেই রেখে দিলাম , ভয়ে হাত কাঁপছিল কিন্তু আজ বলতেই হবে যাই হোক না কেন !!
............
""বাবা! বাবা!!"" " আমি বেলুন কিনবো , আমাকে কিনে দাও!! "
-- আচ্ছা মামুনি! দিবো তো! কোনটা লাগবে?
-- আব্বু, ঐ যে লাল বেলুনটা!!
মেয়ের হাতে লাল বেলুনগুলো দেখে আমার ৮বছর আগের ঐ দিনটার কথা মনে পড়ে গেলো!! সত্যি বলতে আসলেও না বলা কথাগুলো , মাঝে মধ্যে না বলা থেকে যায় !!
-- দিয়েছো মেয়েকে বেলুন কিনে ??
--হ্যাঁ । দিলাম কিনে।
-- আনমনা হয়ে গেলে যে এইখানে এসে ?? কি হয়েছে তোমার ?
-- কই ? কিছুই না । ভ্রম হয়েছিল আর কি !!
(অনিমা আমার হাতটা ধরে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো! আর আমার আরেক হাত ধরে আমার মেয়ে হাটতে লাগলো। )
পরিস্থিতিটাই কেবল ভিন্ন , হয়তো অনামিকা পাশে নেই আমার কিন্তু অনামিকা যার কাছেই থাকুক না কেন হয়তো ভালই আছে!! কেননা ভালবাসার মানুষ এর সাথে জীবনের বাকিটা সময় পার করা ভাগ্যের ব্যাপার।
কিন্তু মাঝে মধ্যে অবাক লাগে যে অনিমা তো আমাকে ভালবাসেনি, আমি তো তার কাছে অপিরিচিত তবুও সে আমাকে অনেক ভালবাসে।হয়তো এটাই আমার ভালবাসা এবং মাঝে মাঝে ছোট্ট মেয়েটির হাসি দেখলে মনে হয় ওর জন্য অতীতটা ভুলে যেতে দ্বিধাবোধ করবো না আমি <৩

Comments

Popular posts from this blog

একটি মধ্যবিত্ত ভালবাসার গল্প

কিছু গল্প সবসময় এক হয় না!  পার্থক্য, ভেদা-ভেদ সবকিছুতেই থাকে।ঠিক তেমনি ভালবাসার গল্পগুলোতেও কিছু মিল-অমিল পাওয়া যায়!আর আজকে ঠিক তেমনি অতি সাধারণ একটা গল্প তুলে ধরতে যাচ্ছি! 'মধ্যবিত্ত' শব্দটা হয়তো সকলেরই অনেক পরিচিত। মধ্যবিত্ত মানুষগুলো ধনী-গরীব হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।তাদের চিন্তা-ভাবনা,চলাফেরা এমনকি জীবনযাপনও ভিন্ন। আর মধ্যবিত্ত ভালবাসা এর মানে বুঝাই যাচ্ছে এর মধ্যেও কিছুটা ভিন্নতা আছে! ♥ কলেজ পড়ুয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের সাথে প্রেম করা বর্তমান যুগের মেয়ের জন্য তুলনামুলক প্যারাময়! কেননা এইসকল ছেলের থাকে না টাকা-পয়সা,মোটরসাইকেল আর কত কি!  কিন্তু মেয়েরা ভুলে যায়, অন্যদের মতো ঐ ছেলেদেরও সুন্দর একটা মন আছে, তারাও ভালবাসতে জানে!  টাকা-পয়সা বাইক এইসব শো অফ করাই কি ভালবাসা?? প্রেমিকার জন্মদিনে বড় অনুষ্ঠান করা, এ্যানিভার্সারি পালন করা আর আজাইরা টাকা খরচও কি ভালবাসা?? :/ ভালবাসা এমন হতে পারে না........ ১০০ টাকায় রিক্সা ভাড়া করে কিছুদূর ঘুরা! পাশাপাশি বসে একসাথে ফুচকা খাওয়া!♥ জন্মদিনে/অথবা অন্যকিছুতে টিফিনের এবং যাতায়াতের টাকা বাঁচিয়ে প্রিয় মানুষের জন্য ছোট্ট কিছু করা ...

তুমি, আমি আর সংসার (খুনসুটে অতীত)

  ২৩ শে জুন : শুভ জন্মদিন,ফায়াজ! :উম্ম, আপনার তাহলে মনে আছে?! ধন্যবাদ! : হ্যাঁ মনে কেনো থাকবে না!  স্বামীর জন্মদিন মনে রাখা একজন স্ত্রীর দায়িত্ব! শুনো টেবিলে ব্রেক-ফাস্ট রেডি করা আছে আর মা নানুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে! বাসা তালা দিয়ে যেয়ো, আমাকে জলদি অফিসে যেতে হবে! : আচ্ছা একটু অপেক্ষা করেন, আমি নামিয়ে দিয়ে আসি! : নাহ নাহ! আপনি খেয়ে বের হয়েন এইটুকুই! এবং শুভ জন্মদিন!  বেশি প্রেসার নিয়েন না জন্মদিনে হাহাহাহা!  ( ফারিন অফিসের জন্য বের হলো) [বিয়ের ৩-৪ মাসের মধ্যে মেয়েটা আমাকে ভালোই চিনে ফেলেছে, যাক ভালো! তিনি ঠিক থাকলেই হলো! আর আজকের এই দিনে আর কি বা চেতে পারি! বছরের ঠিক মাঝে জন্মদিন, ব্যাপারটা ভালোই কিন্তু আজও কেউ কখনো..  উম্ম থাক! এই বুড়া বয়সে এসে এইসব ভাবা ঠিক না! ] বাথরুমে গিয়ে দেখি আয়নায় একটা স্টিকি নোট (শুভ জন্মদিন ডাক্তার সাহেব, হাসি মুখে ব্রাশ করে নাস্তার টেবিলে বসে যেয়েন, ভুলে যেয়েন না কিন্তু) [আমার বারবার নাস্তা করতে ভুলে যাওয়া এই ব্যাপারটা একবারে মাথায় নিয়ে নিয়েছে! খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই একটা মজবুত বন্ধন কাজ করছে দুজনের মাঝে ব্যাপারটা মোটেও খা...

বন্ধুত্ব

বন্ধু শব্দটা মূলত অনেক কমন!  শৈশব থেকেই এই শব্দের যাত্রা শুরু হলেও কৈশোরকাল থেকে বন্ধু শব্দটা উপলব্ধি করা যায়! আর সত্যি বলতে এয়ারটেলের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই আসল বন্ধুত্ব এর মর্ম বুঝা যায়! :p কমবেশি বন্ধু কিন্তু সবারই থাকে।  তবে সব বন্ধু এক রকম না কিংবা একজাতের না. .. খুব অল্প কিছু বন্ধু থাকে, যারা একদমই অন্যরকম !! সবার থেকে ভিন্ন! অন্য বন্ধুরা যখন বৃষ্টি হইলে তোমার জন্য ছাতা নিয়ে দৌড়ায়ে আসবে ... "এই নে " কিংবা এক ছাতার নিচে থেকে একসাথে যাবে! অন্যরকম বন্ধুগুলা তখন উল্টা তোমার মাথার ছাতাটা কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দিয়ে বলবেঃ "ছাতা কি কামে লাগে ?? চল ভিজি !!" বন্ধুর পাল্লায় পড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তোমার জ্বর হবে ...পরিণতি ভালো হবে না! তুমি যখন কাতর গলায় বলবা, তোমার জ্বর আসছে, শুধুমাত্র তোর কারণে!.. তখন ঐ অসাধারণ বন্ধু তোমারে বলবেঃ(হাসতে হাসতে) "তো ?? আজকে জ্বর হইছে, কালকে নিউমোনিয়া হবে !!" "কি বলতেছিস এগুলা ??তুই আমারে বোদোয়া দিতেসিস!!" "হুম ... আমি দোয়া করি তোর নিউমোনিয়া হোক !!" "কেন ? তাতে তোর কি লাভ?" "তোর নিউমোনিয়া হইলে...