(বিয়ে শেষে গাড়িতে)
- আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনার কাধে মাথা রেখে আমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি?
- জি অবশ্যই!
( হ্যালো, আমি ফায়াজ। ঠিক ৪ বছর আগে আমি আমার ক্রাশকে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে রিক্সায় এঅবস্থায় দেখেছিলাম। তাই পুরোনো কথা মনে পড়ে গেলো! কিছুক্ষন আগে আমার বিবাহ সম্পন্ন হলো! লাভম্যারিজ না, মায়ের পছন্দতেই বিয়ে করলাম। যদিও অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিলো প্রেম করে বিয়ে করার,কিন্তু কপালে তা জোটে নি! আমার পাশেই আমার স্ত্রী ফারিন, আমার থেকে ২বছরের ছোট, পেশায় ব্যাংকার। শুনেছি অনেক ট্যালেন্টড, আমি কিভাবে জানবো, কথাই হয়েছে ২-৩ দিন সর্বোচ্চ! কিন্তু এই ২-৩ দিনের পরিচয়ে তিনি আমাকে তার জীবনের গভীরতম সত্য খুলে বলেছিল র্নিদ্বীধায়(যেটা তার মা-বাবা লুকিয়েছিল), মূলত সেইদিনের পর থেকেই তার প্রতি একটা আলাদা সম্মান জেগে উঠেছে! ভুলেও ভাববেন না মায়া কিংবা দরদে বিয়ে আমি রাজি হয়েছি! এক আমার মায়ের পছন্দ এবং দুই তার কথা উভয় কারণেই আমি রাজি ছিলাম, কিন্তু আমার ডাক্তার পেশাকে তিনি একটু ভয়ই পায়,I dnt know why 😅)
- আমার খুবই খারাপ লাগছে, কি করবো বলেন তো?
- (আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম না আসলে তার কি হয়েছে!) আপনি চোখ বন্ধ করে আরো কিছুক্ষণ থাকেন, আমরা এখুনি পৌছে যাবো!
(তিনি আমার হাতটি শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলেন)
.
.
.
(বাসায় পৌছানোর পর...)
- আপনি আমাকে ধরে হাটেন, আমি বুঝতে পারছি আপনি অনেক ক্লান্ত!
(তার গায়ে হালকা জ্বরও ছিলো)
- জি!
তাকে রুমে পৌছে দেওয়ার পর বললাম, মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ুন, আমি কিছু কাজ সেরে আসি!
আম্মু বুঝতে পেরেছিল ফারিন ক্লান্ত, তাই আম্মুও ডাকেনি তাকে আর!
আমি কাজ সেরে রুমে এসে দেখি তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে! এই নিন! এই ঔষুধটা খেয়ে শুয়ে পড়ুন, আশা করি ঘুম চলে আসবে! পেইন করছে নাকি?
: আপনি যেটা ভাবছেন সেটা নয়! আমি খেয়ে শুয়ে পড়ছি আপনিও শুয়ে পড়ুন
:আপনি কিছু খাবেন?
: নাহ! ধন্যবাদ!
...
..
..
ফারিন শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লো, অনেক ক্লান্ত তিনি! আমার নিজের ঘুম যে কোথায় উধাও তা জানি না, কিন্তু তার যদি রাতে খারাপ লাগে.........
(ভোরে ফারিন চোখ খুলে দেখলো যে ,ফায়াজ চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছে! ফারিন তাকে ডাক দিতে গিয়েও দেইনি, কারণ ও জানে যে তিনি তার জন্য রাতে না ঘুমিয়ে তার পাশে বসে জেগেছিল..)
সকালের খাবারের টেবিলে সবাই একসাথে নাস্তা করার পর ফায়াজের মা ফায়াজকে ডাক দিয়ে বলে যে -ফারিনের যদি ওর বাবা-মা এর কথা মনে পড়ে থাকে, তাহলে ঐ বাসা থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে! ফায়াজ তাতে সম্মতি জানায়!
বিকাল ৪টায়...
:আপনি রেডি হন! আপনাকে একটু হাওয়া খাওয়াতে নিয়ে যাবো!
:আজ ইচ্ছে করছে না অন্য কোনোদিন!
:দেখেন আপনি সারাদিন চুপ-চাপ ছিলেন, চলেন আমার সাথে আপনার ভালো লাগবে!
:আচ্ছা, ঠিক আছে!
.
:গাড়ি বের করলেন না যে?
: আজকে আপনাকে রিক্সায় ঘুরাবো! চলেন আমার সাথে!
(সংসদ ভবনের সামনে)
:হাটতে পছন্দ করেন তো?নাকি মনে মনে আমাকে বকা দিচ্ছেন!
:নাহ নাহ তেমন কিছু না! পছন্দ করি
:ফুচকা খাবেন নাকি আইসস্ক্রিম?
: উম! আপাতত কিছুই না! আসেন ঐখানে বসি!
:আচ্ছা চলুন!
:আপনাকে আমি বলেছিলাম আমার অতীত আছে, খুবই বাজে অতীত! তা জানা সত্তেও আপনি আমাকে এখনো একবারের জন্য হলে জিজ্ঞাসা করেন নি কি হয়েছিল? আপনার ইচ্ছা করেনি জানার?
:আপনার অতীত কেবলমাত্র আপনারই! এতে আপনার বিন্দুমাত্র হাত নেই এবং আমি জেনেও কোনো লাভ নেই! মূলকথা হলো আপনি আমার সাথে আগেই সব শেয়ার করেছেন,সেটা করেছেন অবশ্যই আমার উপর ভরসা/বিশ্বাস রেখে! আমি সেই বিশ্বাসের উপর দাড়িয়ে আছি আপনার জন্য! অতীতের জন্য তো বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নষ্ট করা যাবে না!
তবে আমার বিশ্বাস আপনি সময় হলে আমাকে ঠিকই বলবেন আর না হয় একটা সময় ঠিকই নিজ থেকেই ভুলে যাবেন! এইটা আমার বিশ্বাস আপনার উপর।
: কি খাওয়াবেন আজকে আমাকে?
: আপনি বলুন! দিন আজকে আপনার! পরে যেকোনো দিন না হয় আমার আবদার থাকবে।😅
:আইসস্ক্রিম?
: আচ্ছা!
(আইসস্ক্রিম খেতে খেতে)
: আপনি কি আপনার চাকুরীতে খুশি?
:হঠাত এই প্রশ্ন?
: নাহ! আসলে আপনি চাইলে আপনার ঐদিকের কথাও আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন! একজন ডাক্তার না হয়ে একজন উপকারীর মতো আপনাকে হালকা উপদেশ দিতে পারি!
: মাত্র ১ মাস হলো ঢুকেছি! আপাতত খারাপ লাগছে না। দেখি সামনে কি হয়!! কিন্তু ভয় তো অন্য কিছুর!
: ভালোই তো! তাহলে আবার ভয় কিসের?
: আসলে এই চাকুরী,সংসার কিভাবে ম্যানেজ করবো তা বুঝতে পারছি না!
: আরেহ! এইটা তো একদম সহজ! আমি বলি শুনেন, আপনি সকালে উঠে ব্রাশ করতে করতে আমাকে ডাক দিবেন এবং আপনি গোসলে যাবেন আর ঐদিকেআমি চায়ের পানি দিবো আর পারলে হালকা নাস্তা রেডি করবো যদি আমার সামর্থ্যে কুলায় আর কি! আপনি বের হওয়ার পর আমি যাবো গোসলে, এই ফাকে আপনি রেডি হবেন আর টেবিলে বসে পড়বেন, এরপর দুজনে মিলে নাস্তা খেয়ে আপনাকে আপনার অফিসে নামিয়ে দিয়ে আমি বাসায় এসে পড়াশুনা করবো!
সিম্পল! হাহাহা!
:এরপর? আপনার কাজ?
: আরেহ আমার তো সবসময় হাসপাতালে যাওয়া লাগে না! মাঝে মাঝে! আর চেম্বার তো সন্ধ্যার পর! আপনাকে অফিস থেকে বাসায় পৌছে দিয়ে আমি চেম্বারে চলে যাবো!
:এতো সহজ নাকি!
: অনেকটা! দুজনে মিলে থাকলে আরো সহজ হয়ে যাবে!
: আর আম্মু?
: শুনেন কিছু হোক আর না হোক, আপনি আর আমার আম্মু দুইজনে এই ২-৩ দিনের মধ্যেই বেস্টু হয়ে যাবেন! পরে দেখবো আপনি আমাকে বেলই দিবেন না!
: হাহাহা! আপনি কি সবসময় এভাবে গুছিয়ে কথা বলেন?
: তা জানি না! তবে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করি, যাতে আমাকে দেখে অন্য কেউ খুশি থাকে! চলেন এখন উঠা যাক!
: আচ্ছা,শুনেন আপনি আগে কাউকে ভালোবেসেন?
: ..............
(আমি বলিনি সে বুঝেনি) এইটুকুই!
[সেদিন যাওয়ার পথে আমি আমার মানিব্যাগ থেকে সেই পুরোনো ছবিটি ফেলে দিলাম, আশা করি সেও ভালো আছে তার প্রিয় মানুষের সাথে]
ফারিন অনেক খুশি ছিলো সারা রাস্তায়,তার মুখে এক হারানো উজ্জ্বলতার অনুভূতি আমি ফিরে পাচ্ছিলাম! সে অজান্তে আমার হাত ধরে নি,বরং সে ইচ্ছা করেই আমার হাত করে ধরে রিক্সায় বসে ছিলো।
বাসায় রাতে আম্মু আর ফারিনের আড্ডা দেখে আরো বুঝে গিয়েছিলাম এখন সে ঠিক আছে! আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো, কারণ আম্মু জানে তার ছেলে কি পারে!
আমিও মেনে নিয়েছিলাম এই জীবনকে, কেননা ফারিন যখন আমার হাত ধরেছিলো,তখন আমি তার আশার একটু আলো খুজে পেয়েছিলাম নিজের মধ্যে! আমার জন্য কেউ একজন তার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে,আমার কাছে এর চেয়ে বড় কি আর হবে! নিজের জীবনের সেই পুরোনো আবেগকে সেদিন রাতে বারান্দা থেকে ঝেড়ে ফেলেদিলাম। জ্যোৎস্নার আলোতে ফারিনের সেই নিষ্পাপ চেহারা আজও আমাকে নতুন করে বাচতে শিখায়,নতুন জীবনের সূচনার আলো দেখায়! আমিও প্রস্তুত ছিলাম পরবর্তী দিনের জন্য কেননা....
আমার বলা সেই কথাগুলো তখন বাস্তবে রুপ নিবে.....
: ফায়াজ! উঠো আমি ব্রাশ করছি, তুমি ওয়াশরুমে যাও! তাড়াতাড়ি !!
...
...
..
...
...
(১ মাস পর)
[রাতে অনেকক্ষণ জাগা ছিলেন বলে ,আপনাকে আর উঠায়নি সকালে
আপনার ডায়েরীতে লেখা ছিলো যে, "RITVIZ-LIGGi গানে আপনার স্ত্রীর পাগলামী দেখার"
আমি অফিসে যাওয়ার পর টেবিল থেকে আপনার সকালের চা আর নাস্তা নিয়ে ল্যাপটপে বসে দেখে নিন! আশা করি ভালোই লাগবে আপনার! এরপর সন্ধ্যায় আমি বাসায় আসার পর আমাকে জানিয়েন কেমন লেগেছে! ]
ফায়াজ কাগজটি রেখে মুচকি হেসে নাস্তা-চা নিয়ে ল্যাপটপের সামনে বসলো।
...
...
(TO BE CONTINUED....)
Comments
Post a Comment