Skip to main content

স্বপ্ন

-- বাবা, পরীক্ষা কেমন হইসে? এইবার চান্স হবে তো?
-- মা, পরীক্ষা অনেক ভালো হইসে!
-- আলহামদুলিল্লাহ!!  এতো বড় স্কুলে পড়বা তুমি, আমি তোমাকে দিতে আসবো, নিতে আসবো। মাঝে মাঝে তুমি খেলবা, ভাল রেজাল্ট করবা। অনেক ভালো স্কুলজীবন যাবে তোমার!
-- মা,  রেসিডেন্সিয়াল এ কি এবার হবে আমার?
-- অবশ্যই! ভালো পরীক্ষা দিলে চান্স পাবেই! :)
-- তাহলে মা আমার অনেকগুলো স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে!!  :) এত্ত বড় মাঠে আমি খালি খেলবো আর দৌড়াবো!!
..................
( রেজাল্ট পেয়ে রাতুল বাসায় আসলো! অতপর সে নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো!)
-- শেষ!! লাইফ শেষ! ইংরেজীতে মিস মানেই লাইফ শেষ! আর মনে হয় কোথাও আপ্লাই করতে পারবো না!
এখন কি হবে?  বাবা-মাকে কি বলবো!  আর আমার স্বপ্নগুলো কি অদৃশ্য হয়ে যাবে!!  :'(
.............
--বাবা, আমার জন্য তুমি দোয়া কইরো!যাতে আমি শহরে গিয়ে কিছু কামাইতে পারি!
-- হ রে বাবা! তুই আমাদের শেষ সম্বল! তুই পারবি আমার শেষ স্বপ্ন পূরণ করতে।
-- চিন্তা কইরো না বাবা!  আমি কামাই করে তোমার জমি তোমার কাছে ফিরায় আনমু!  মা রে নতুন শাড়ি কিনা দিমু!  আমি অনেক কাজ করবো!  এবং
একদিন তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করবেই তোমাদের এই ছেলে!
( মা দরজার কোণে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপে কাঁদছিল। হয়তো নিজের ছেলেকে বিদায় দেওয়াটা তার কাছে অতি কষ্টের)
.......................
--এই শুনো! আমি যা দেখি তুমি কি তা দেখো??
-- হুম!  কিন্তু হঠাত?
-- আচ্ছা আমি দেখি একটা ছেলে.......
-- থামো আর বলা লাগবে না!
-- আচ্ছা তুমি কি আমাকে মিস করবে?
-- হয়তো!  :(
-- নতুন বউ পেয়ে ভুলে যেও না!
-- এই তুমি থামবে!! কি শুরু করলে!
-- আসলে এটাই বাস্তবতা!  আমাদের ৪ বছরের প্রেম শেষমেষ ব্যর্থ! সকল দেখা স্বপ্নগুলো ধূসর হয়ে রয়ে গেল!
-- আচ্ছা কালকে তুমি লাল বেনারসি পরবে?
--হ্যা!
-- আমি দেখবো!  কাছ থেকে হবে না হয়তো একটু দূরে থেকে!
সূর্যাস্ত এর সাথে সাথে তাদের ভালবাসার ছোট্ট স্বপ্নগুলো অস্ত গেলো!
........................
-- অই দেখতো আমার রোল আসে নাকি?
-- দাড়া দেখতেসি!
(অনেক কষ্ট এর পর রেজাল্টটা দেখা গেলো!)
-- কি রে?  কি হইসে? পাই নাই চান্স?
--............
-- বাদ দে!  ব্যাপার না!  পড়লাম না বুয়েটে! আরও কট ভার্সিটি আছে!
-- দোস্ত তোর চান্স হইসে! :) তুই সফল আংকেল-আন্টির স্বপ্ন পূরণ করতে!
-- সত্যি? কিন্তু তোর?
-- নাহ রে হয় নাই!  স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো!
-- তোর ইচ্ছা বেশি ছিল!  আমি তো তোর জন্যই এক্সাম দিলাম আর এখন? :'(
-- বাদ দে!  ব্যাপার না! এখন মিষ্টি খাওয়া!
.......................
--ধুর আর ভালো লাগে না!
--কেন আর কি হইসে?
--সারাদিনও একটা পয়সাও কামাইতে পারলাম না! রাতে খামু কি আজকে?
--চিন্তা লইস না!  কিছু না কিছু একটা হয়েই যাবে!
-- বা** হবে আমার! খালি ভাইবেই গেলাম কিছুই করতে পারলাম না!  জীবন অর্থহীন!
-- কি আর করবি!  গরীবের এই দশাই হয়! গরীব বলে আজ আমাদের জীবন ও স্বপ্ন সবই অর্থহীন!
...................
-- আপনি কি নিজেকে এই চাকরির যোগ্য মনে করছেন?
- জি!  এই চাকরিটা আমার খুব দরকার স্যার!
-বুঝলাম কিন্তু আপনার মতো এইরকম জিপিএ ৫ রেজাল্ট এর আরো অনেক কেন্ডিডেট আছে! আমারা আপনাকে কেন নিবো?
-স্যার হয়তো আমার মতো অন্য কারোর এই চাকরির গুরুত্ব আর কারো নেই!  কেননা তাদের কারো বোনের বিয়ে দেওয়া বাকি নে!, হার্টের রোগী বাবা হাস্পাতালে নেই আর বৃদ্ধা মায়ের সেবার জন্য কেউ নেই!
এসব আমার উপর নির্ভরশীল!  আর আমি যেভাবে এই চাকরির মূল্য রাখি তা অন্য কেউ রাখে না!
(কিছুক্ষন চিন্তা করলেন!)
-আচ্ছা আপনি এখন আসতে পারেন!  রেজাল্ট ২ ঘন্টা পর জানানো হবে!
( আগামী ২ ঘন্টা পর হয়তো অনেক কিছুর সিদ্ধান্ত হবে)
...................
প্রত্যেক মানুষ এর কিছু না কিছু স্বপ্ন থাকে! স্বপ্নটা কিন্তু কখনো সার্থকেন্দ্রিক হয় না!
মায়ের স্বপ্ন তার সন্তান ঢাকার বিখ্যাত স্কুল রেসিডেন্সিয়ালে পড়বে! এতে তার সন্তানের ভবিষ্যত উজ্জল হবে!! ছেলে কি পারবে তার মায়ের স্বপ্ন পুরণ করতে?
হয়তো রেজাল্ট এর উপর নির্ভর করে কারো জীবনের স্বপ্ন! কেননা বাবা-মা এর কষ্টের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করে তাদের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হওয়াটা অতি কষ্টের!
তার জীবন কি সত্যিই শেষ?
গরীব বাবা-মা এর স্বপ্ন পূরণ করতে তাদের ছেলে কি আদৌ সফল হবে?
৪ বছরের প্রেমের অন্তে তারা দুজন কি তাদের বাকীজীবন সুখে থাকবে?
বুয়েটে চান্স না পেয়ে কি তার জীবনযুদ্ধ কি শেষ?
গরীবের পেটে কি রাতে খাবার যাবে?  নাকি আবার ক্ষুধাময় রাত কাটিয়ে স্বপ্ন এর নতুন সকাল দেখবে তারা?
চাকরি পেয়ে কি সে তার জীবনের বাকি স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে পারবে??
হয়তো সবাই চায় তাদের স্বপ্ন পূরণ হোক!
নিজেদের জন্য না হলেও নিজের আপনজনের জন্য!

Comments

Popular posts from this blog

একটি মধ্যবিত্ত ভালবাসার গল্প

কিছু গল্প সবসময় এক হয় না!  পার্থক্য, ভেদা-ভেদ সবকিছুতেই থাকে।ঠিক তেমনি ভালবাসার গল্পগুলোতেও কিছু মিল-অমিল পাওয়া যায়!আর আজকে ঠিক তেমনি অতি সাধারণ একটা গল্প তুলে ধরতে যাচ্ছি! 'মধ্যবিত্ত' শব্দটা হয়তো সকলেরই অনেক পরিচিত। মধ্যবিত্ত মানুষগুলো ধনী-গরীব হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।তাদের চিন্তা-ভাবনা,চলাফেরা এমনকি জীবনযাপনও ভিন্ন। আর মধ্যবিত্ত ভালবাসা এর মানে বুঝাই যাচ্ছে এর মধ্যেও কিছুটা ভিন্নতা আছে! ♥ কলেজ পড়ুয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের সাথে প্রেম করা বর্তমান যুগের মেয়ের জন্য তুলনামুলক প্যারাময়! কেননা এইসকল ছেলের থাকে না টাকা-পয়সা,মোটরসাইকেল আর কত কি!  কিন্তু মেয়েরা ভুলে যায়, অন্যদের মতো ঐ ছেলেদেরও সুন্দর একটা মন আছে, তারাও ভালবাসতে জানে!  টাকা-পয়সা বাইক এইসব শো অফ করাই কি ভালবাসা?? প্রেমিকার জন্মদিনে বড় অনুষ্ঠান করা, এ্যানিভার্সারি পালন করা আর আজাইরা টাকা খরচও কি ভালবাসা?? :/ ভালবাসা এমন হতে পারে না........ ১০০ টাকায় রিক্সা ভাড়া করে কিছুদূর ঘুরা! পাশাপাশি বসে একসাথে ফুচকা খাওয়া!♥ জন্মদিনে/অথবা অন্যকিছুতে টিফিনের এবং যাতায়াতের টাকা বাঁচিয়ে প্রিয় মানুষের জন্য ছোট্ট কিছু করা ...

তুমি, আমি আর সংসার (খুনসুটে অতীত)

  ২৩ শে জুন : শুভ জন্মদিন,ফায়াজ! :উম্ম, আপনার তাহলে মনে আছে?! ধন্যবাদ! : হ্যাঁ মনে কেনো থাকবে না!  স্বামীর জন্মদিন মনে রাখা একজন স্ত্রীর দায়িত্ব! শুনো টেবিলে ব্রেক-ফাস্ট রেডি করা আছে আর মা নানুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে! বাসা তালা দিয়ে যেয়ো, আমাকে জলদি অফিসে যেতে হবে! : আচ্ছা একটু অপেক্ষা করেন, আমি নামিয়ে দিয়ে আসি! : নাহ নাহ! আপনি খেয়ে বের হয়েন এইটুকুই! এবং শুভ জন্মদিন!  বেশি প্রেসার নিয়েন না জন্মদিনে হাহাহাহা!  ( ফারিন অফিসের জন্য বের হলো) [বিয়ের ৩-৪ মাসের মধ্যে মেয়েটা আমাকে ভালোই চিনে ফেলেছে, যাক ভালো! তিনি ঠিক থাকলেই হলো! আর আজকের এই দিনে আর কি বা চেতে পারি! বছরের ঠিক মাঝে জন্মদিন, ব্যাপারটা ভালোই কিন্তু আজও কেউ কখনো..  উম্ম থাক! এই বুড়া বয়সে এসে এইসব ভাবা ঠিক না! ] বাথরুমে গিয়ে দেখি আয়নায় একটা স্টিকি নোট (শুভ জন্মদিন ডাক্তার সাহেব, হাসি মুখে ব্রাশ করে নাস্তার টেবিলে বসে যেয়েন, ভুলে যেয়েন না কিন্তু) [আমার বারবার নাস্তা করতে ভুলে যাওয়া এই ব্যাপারটা একবারে মাথায় নিয়ে নিয়েছে! খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই একটা মজবুত বন্ধন কাজ করছে দুজনের মাঝে ব্যাপারটা মোটেও খা...

বন্ধুত্ব

বন্ধু শব্দটা মূলত অনেক কমন!  শৈশব থেকেই এই শব্দের যাত্রা শুরু হলেও কৈশোরকাল থেকে বন্ধু শব্দটা উপলব্ধি করা যায়! আর সত্যি বলতে এয়ারটেলের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই আসল বন্ধুত্ব এর মর্ম বুঝা যায়! :p কমবেশি বন্ধু কিন্তু সবারই থাকে।  তবে সব বন্ধু এক রকম না কিংবা একজাতের না. .. খুব অল্প কিছু বন্ধু থাকে, যারা একদমই অন্যরকম !! সবার থেকে ভিন্ন! অন্য বন্ধুরা যখন বৃষ্টি হইলে তোমার জন্য ছাতা নিয়ে দৌড়ায়ে আসবে ... "এই নে " কিংবা এক ছাতার নিচে থেকে একসাথে যাবে! অন্যরকম বন্ধুগুলা তখন উল্টা তোমার মাথার ছাতাটা কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দিয়ে বলবেঃ "ছাতা কি কামে লাগে ?? চল ভিজি !!" বন্ধুর পাল্লায় পড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তোমার জ্বর হবে ...পরিণতি ভালো হবে না! তুমি যখন কাতর গলায় বলবা, তোমার জ্বর আসছে, শুধুমাত্র তোর কারণে!.. তখন ঐ অসাধারণ বন্ধু তোমারে বলবেঃ(হাসতে হাসতে) "তো ?? আজকে জ্বর হইছে, কালকে নিউমোনিয়া হবে !!" "কি বলতেছিস এগুলা ??তুই আমারে বোদোয়া দিতেসিস!!" "হুম ... আমি দোয়া করি তোর নিউমোনিয়া হোক !!" "কেন ? তাতে তোর কি লাভ?" "তোর নিউমোনিয়া হইলে...